গাজী আব্দুল আলীম
দেশ ও জাতির কল্যাণে সাংবাদিক সমাজ রৌদ্র ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাদেশে দিনের পর দিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।বস্তূনিষ্ঠ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে জীবন বাজি রেখে সংবাদ পরিবেশন করেন। কোথাও কোন প্রাপ্তি বা প্রত্যাশা আশা করেন না।
সারাদিন কঠোর পরিশ্রম আর দৌড় ঝাঁপ এর মধ্যে দিয়ে তাদের খবর সংগ্রহ করতে হয়। আছে জীবনের ঝুঁকি, হুমকি ধামকি। দুর পাল্লায় মোটর সাইকেল, ক্যামেরা, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কখনো কখনো অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমান সমাজে দলছুট ও নিয়ন্ত্রণ হীন প্রশাসনিক অবকাঠামোয় সাংবাদিক গন খুব বেশি বেশি লাঞ্চিত হচ্ছেন। পেশাদারি সাংবাদিকগন দৈনন্দিন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খুব বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।৫ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বন্যার স্রোতের মত উদীয়মান নেতাদের পদচারণায় বাংলাদেশ আজ প্রকম্পিত। প্রতি টি সেক্টরে তাদের প্রভূত্ত ও পেশীশক্তির প্রভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সংগ্রহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টেন্ডার বাণিজ্যে, চাকরি নিয়োগবিধি, জনস্বাস্থ্য,এল জি ইডি ডিপার্টমেন্ট, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল দপ্তরের কার্যক্রম স্থবিরতা ও অস্বাভাবিক হয়ে যাবার কারনে প্রকৃত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে গেলে আমরা তাদের বলির খোড়াগ হতে হয় সাংবাদিকদের।আঙুলী ইশারায় ঝাপিয়ে পড়েন পেটোয়া বাহিনী। অপমান লাঞ্চিত হেনস্থা করে বের করে দেন অফিস থেকে।
এ ছাড়া দূর্নীতি পরায়ন অফিসার দের দুর্নীতি তো বন্ধ হয়নি। সরকার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের কৌশলগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তো বদলায়নি।
মফস্বল সাংবাদিক গন বাংলাদেশে খুব বেশি বেশি লাঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রথমত মফস্বল সাংবাদিক কাজকর্ম করেন উপজেলা গুলোর গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর গুলোতে।
উপজেলা পরিষদ, এসি ল্যান্ড অফিস, থানা প্রশাসন , স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,তহশীল অফিস, সমাজ সেবা অফিস,যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পরিসংখ্যান অফিস,এল জি ইডি ডিপার্টমেন্ট, কৃষি অধিদপ্তর, মতস অধিদপ্তর ,
বিভিন্ন এন জিও, ব্যাংক বীমা , ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এর দূর্নীতির অভিযোগ পেলে সংবাদ সংগ্রহে সবচেয়ে বড় বাধা ও বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের মদদ পুষ্ট সাংবাদিকদের উস্কানি তে ও সাংবাদিক দের বিভিন্ন ইউনিটের পরস্পর পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা দ্বন্দ্ব সন্দেহের কারনে স্থানীয় প্রশাসনের সহিত যাদের ভালো সম্পর্ক তাদের কৌশল গত কূটনৈতিক কারনে স্বচ্ছ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে সবচেয়ে হামলা স্বীকার হতে হয়।
প্রতিটি জেলায় উপজেলায় অনেক গুলো সাংবাদিক সংগঠন আছে।পেশাগত মত পার্থক্যের কারণে ও তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে স্থানীয় প্রশাসনের মদদ পুষ্ট সাংবাদিক সংগঠন সবসময় তাদের স্বার্থ হাসিল করেন। কিন্তু সেখানে স্রোতের বিপরীতে উঠে আসা নির্ভিক সাংবাদিকদের তারা পথের কাঁটা মনে করে নেতৃত্বের কোন্দলে জড়িয়ে ফেলেন।ফলে সুযোগ টা কাজে লাগান সুবিধা বাদী সংগঠন আর এ সুযোগ টাও কাজে লাগান স্হানিয় প্রশাসন।
রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব বলয়ে ধাবিত প্রশাসন উপায়ান্তর দিশা না পেয়ে প্রশাসনিক খড়গে চাপিয়ে দেন নিরীহ সাংবাদিক দের উপর।
এ ছাড়া রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে অনেক সাংবাদিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। পক্ষ বিপক্ষ রাজনৈতিক বলয় এর জন্য দায়ী। এ গুলো অচিরেই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছ সাংবাদিকতায় সবাই কে এক হতে হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু সাংবাদিকতায় সবাই কে এক থাকতে হবে। ন্যায় নীতিতে অটল থাকতে হবে। পেশাগত কৌশলতায় সকল সাংবাদিক সমাজ নীতি যে এক অভিন্ন থাকাটা খুব জরুরী।
সৌহার্দ্য ও ভালবাসায় প্রতিটি সাংবাদিক সংগঠন আভ্যন্তরীণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।নিজেদের ভিতর আভ্যন্তরীণ কোন্দল খুব দ্রুততার সাথে মিটিয়ে ফেলতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের দোষর না হয়ে স্বাধীন ও স্বচ্ছ সাংবাদিকতায় সমাজের দূর্নীতি অনিয়ম অত্যাচার অবিচার তূলে ধরতে হবে। যেখানে অনিয়ম যেখানে অত্যাচার সেখানে একযোগে সকল কে হানা দিতে হবে। বিভক্ত না হয়ে শক্ত হাতে দূর্নীতির শিকড় উপরে ফেলতে হবে। একসাথে একযোগে সকল কে স্বচ্ছ সাংবাদিকতায় এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে কোন সাংবাদিক অন্যায়ভাবে লাঞ্চিত হবে সেখানেই সম্মিলিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সংগঠন ভিন্ন হোক কোন অসুবিধা নেই। পেশাদারিত্বে সবাই এক হতে হবে। তবেই বাড়বে সাংবাদিকদের সামাজিক মূল্যবোধ সন্মান প্রতিপত্তি।
দেশের কল্যাণে যারা নিবেদিত প্রাণ। তারা আজ লাঞ্চিত বঞ্চিত অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রতিটি সেক্টরে কোটা আছে সাংবাদিক দের কোনো কোটা নেই। দেশের কল্যাণে যারা নিবেদিত তারা আজ সমাজে সবচেয়ে বেশী লাঞ্চিত ও অবহেলিত। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সকল সাংবাদিক সংগঠন কে একযোগে একসাথে কাজ করতে হবে। সাংবাদিক সূরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সাংবাদিকদের প্রনয়ন করতে হবে। সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও তথ্য সংগ্রহের সময় প্রতিষ্ঠান গুলো কে বাধ্যতামূলক সকল ধরনের সহযোগিতা বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হবে। সাংবাদিকদের কোনো কাজে বাধা তো দুরের কথা তাদের সকল সেক্টরে সময়ক্ষেপণ না করে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত অনুমোদন করে দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব বলয় থেকে সাংবাদিক দের স্বাধীন ভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
তবেই ফিরবে নিরুপেক্ষ সাংবাদিকতার পরিবেশ। সাংবাদিক কোন দলের নয় কোন গোষ্ঠীর নয়, কোন ব্যক্তির নয়। সাংবাদিক সমাজ হলো দেশের,দশের মা মাটি মানুষের গনতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও সূশীল সমাজের নাগরিক অধিকার রক্ষায় এক স্বাধীন দক্ষ মানব যন্ত্র।