ক্রীড়া প্রতিনিধি
বয়স তার ৪০ কিন্তু ফুটবল মাঠে যখন খেলতে নামেন, তখন তার শরীরের বয়স নেমে আসে অনেক নিচে। কখনো কখনো মনে হবে, ২৫-২৬ বছরের তরুণরাও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে কুলিয়ে উঠবেন না। ক্যারিয়ারজুড়ে পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি অসংখ্য প্রতিকূলতাকে জয় এবং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে এসেছেন। ২০২৬ এর গ্রীষ্মে নামবেন ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলতে। যেখানে তিনি অংশ নেবেন অন্যতম প্রধান তারকা হিসেবে।
ক্যারিয়ারে ৫টি ব্যালন ডি’অর এবং ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। সঙ্গে একটি ইউরো এবং একটি উয়েফা নেশন্স কাপ রয়েছে তার ঝুলিতে। কিন্তু লিওনেল মেসির মত একটি বিশ্বকাপ শিরোপা নেই রোনালদোর ঘরে। ২০২২ সালে মেসি প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে ফেলেছেন।
এবার কি তাহলে রোনালদোও বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করতে মরিয়া! অন্তত মাঠের পারফরম্যান্স, তার কঠোর পরিশ্রম এবং এই বয়সেও নিজেকে পুরো ৯০ মিনিটের জন্য ফিট রাখা- অস্বাভাবিক। এসবই বলে দেয়, বিশ্বসেরার খেতাব জিততে তিনি কতটা মরিয়া।
বুধবার রাতে উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স এবং একটি অসাধারণ গোলই বলে দিচ্ছে, রোনালদোর বয়সটা কেবলই সংখ্যা। তার এখনই থেমে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ জিততে প্রয়োজনে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারকে টেনে নিতে পারেন বলেও ধারণা করছেন ইউরোপের ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।
একটি বিশ্বকাপ জিততে ২০৩৪ পর্যন্তও খেলবেন রোনালদো!
বুধবার রাতে উয়েফা নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স এবং একটি অসাধারণ গোলই বলে দিচ্ছে, রোনালদোর বয়সটা কেবলই সংখ্যা। তার এখনই থেমে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ জিততে প্রয়োজনে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত ক্যারিয়ারকে টেনে নিতে পারেন বলেও ধারণা করছেন ইউরোপের ফুটবল বিশেষজ্ঞরা।
এই ৪০ বছর বয়সেও দারুণ প্রতিভা এবং প্রবল উচ্চাকাঙ্খা অটুট রয়েছে রোনালদোর। যিনি বর্তমানে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-নাসরের হয়ে খেলছেন এবং পর্তুগাল জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জিতিয়ে ফুটবল জগতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন মেসি। এ সাফল্য রোনালদোকে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশ্বকাপে রোনালদোর সর্বোচ্চ সাফল্য ২০০৬ সালে সেমিফাইনালে পৌঁছা। এখন তার লক্ষ্য ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ এবং সম্ভাব হলে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়া।
ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোনালদোর শারীরিক ফিটনেস এবং মানসিক দৃঢ়তা তাকে এই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। যিনি এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন। ২২০ ম্যাচে করেছেন ১৩৭ গোল।
বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক জার্মান ফুটবলার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান নেশন্স লিগের সেমিফাইনালে রোনালদোর হাতে জার্মানির পরাজয়ের পর ইএসপিএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি তিনি দলের জন্য তার সফলভাবে কাজ করে যেতে পারেন, তবে কোনো সন্দেহ নেই যে তিনি এখনো খেলা চালিয়ে যেতে পারেন- এই গ্রীষ্মে এবং আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপেও।’
এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য! সৌদি আরবে যাওয়ার পর আমরা তাকে কিছুটা চোখের আড়াল করেছি, কিন্তু সেখানেও তিনি তার কাজ করে দেখিয়েছেন।
একইভাবে কাতারে আমরা মেসির ক্ষেত্রে যা দেখেছি, তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে সব ট্রফি দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন – দুটি কোপা আমেরিকা এবং এরপর বিশ্বকাপ! রোনালদোও এখনো সাফল্যের জন্য প্রস্তুত। হয়তো আগামী গ্রীষ্মে বিশ্বকাপে তিনি এবং তার পর্তুগাল এই সাফল্য অর্জন করবে। পর্তুগাল কিন্তু এখন একটি অসাধারণ দল ।
সাবেক নরওয়েজিয়ান ফুবলার ইয়ান ইয়াগে ফিয়োর্টফট, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করেন। এক্স-এ পোস্ট করা এক মন্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ৪০ বছর বয়সী রোনালদো এবং ফ্রান্সিসকো কনসেইকাও পর্তুগালের হয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
রোনালদোরর সমর্থনে ফিয়োর্টফট বলেন, ‘তিনি যতদিন অবসর বিলম্ব করবেন, ততদিনই সর্বোচ্চ মঞ্চে পারফর্ম করে যেতে পারবেন। তার বয়স এখন ৪০। অথচ এই বয়সেও তিনি তার কাজ করে যাচ্ছেন। পর্তুগালের জাতীয় দলের কোচেরও প্রশংসা করতে হবে আমাদেরকে, যিনি রোনালদোর জন্য সঠিক ভূমিকা খুঁজে বের করেছেন।
ফিয়োর্টফট বলেন, হ্যাঁ, বেঞ্চে বসে দেখা যায় যে নতুন খেলোয়াড় মাঠে নামলে দল আরও ভালো খেলে, কিন্তু, তিনি ১৩৭টি গোল করেছেন – এক, তিন, সাত! আমি যখন ছোট ছিলাম, কোনো খেলোয়াড় তাদের দেশের হয়ে ৩৭টি গোল করলে তা অসাধারণ বলে গণ্য হতো। আর এই লোকটির ২২০টি ম্যাচও রয়েছে! এই মানুষটি সম্ভবত ২০৩৪ সালে সৌদি আরবেও (বিশ্বকাপ) খেলবে! তিনি যা করছেন তা অবিশ্বাস্য!
অন্যদিকে, মেসি তার বিশ্বকাপ জয়ের পর ইন্টার মিয়ামির হয়ে মেজর লিগ সকারে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। যদিও রোনালদোর সংকল্প এবং তার অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা ফুটবল ভক্তদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। আপাতদৃষ্টিতে ২০৩৪ বিশ্বকাপ খেলা তার জন্য অসম্ভব। তবে, ২০৩০ বিশ্বকাপ তিনি যদি খেলেন, তাহলে সেটা অস্বাভাবিক কিছু হবে না। এরপরও যদি তিনি ২০৩৪ বিশ্বকাপে অংশ নেন, তবে তা হবে ফুটবল ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
রোনালদো এরই মধ্যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তার ছেলের সঙ্গে একই ম্যাচে খেলবেন। ১৪ বছর বয়সী রোনালদো জুনিয়র এরই মধ্যে পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে অভিষেক ঘটিয়েছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে।
রোনালদো এবং মেসির এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। দুজনেই তাদের অসাধারণ কৃতিত্বের মাধ্যমে ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এখন দেখার বিষয়, রোনালদো কি তার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে মেসির মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে পারবেন!