লেবুর মা এই মাত্র ভিজা শরীরে ঘরে প্রবেশ করলো। ও ঘর থেকে জোর গলায় ঢুপঢাপ আওয়াজ এর শব্দ আর কান্না ভেসে আসছে। সমিরুদ্দিন আলেয়াকে বেধড়ক মারধর করছে। আলেয়ার তিন বছরের ছেলেটা প্রাচীর হয়ে দাড়াচ্ছে। মারধর চলছে।
খুলনা সাত নম্বর ঘাট বস্তিতে চিরায়ত প্রতিদিনকার ঘটনা এটা। লেবুর মা জরিনা সাত নম্বর ঘাটে গম টোকায় তার স্বামী সমিরুদ্দিন ভ্যান গাড়ি চালায়। ঘরে তার আরো একটা বউ রয়েছে। প্রথম বউ জরিনার তিন ছেলে মেয়ে আর ছোট বউয়ের এক ছেলে। একসময় সমিরুদ্দিনের খুলনা শেখপাড়ায় তিনতলা বাড়ি ছিল, অভাব ছিলো না, পেটে ক্ষুধা ছিলো না, ব্যাংকে অগাধ টাকাও ছিলো। কিন্তু সমিরুদ্দিন এখন ভ্যান গাড়ি চালিয়ে জীবন ও জীবিকা চালায়।
গম টোকায়ে টোকায়ে জরিনা বেশ কিছু টাকা জমিয়ে ফেলেছে। একটা আটো গাড়ি কেনার চেষ্টা করছে। স্বামী সমিরুদ্দিনকে অটো গাড়ি দিবেনা, ভাড়া দিবে। কারণ স্বামীকে সে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাসের মর্যাদা সে রাখেনি। জরিনা’র আনন্দময় জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। উচ্চ পরিবারের মেয়ে সে, বড়ো পরিবার দেখে বিয়ে হয়েছিল কিন্তু আজ সবই দুঃস্বপ্ন। সব শেষ করে দিয়েছে। তার সংসারটাও দোজখ বানিয়ে দিয়েছে।
সমিরুদ্দিন ইয়াবা ও জুয়ায় আসক্ত। এই নেশা তাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সব শেষ করে দিয়েছে তার এই বদ অভ্যাস। শেষে বাকিটুকুন শেষ করে নিঃস্ব করে দিয়েছে আলেয়া।
আজ সকাল টা অন্য রকম। সমিরুদ্দিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে, সাধারণত এরকম হয়না। হঠাৎ দেখে জরিনার দরজা হাঃ করে খোলা। বুকের ভিতর ধব করে ওঠে, এমনটি কখনো হয়না তার। এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। জরিনা নেই! বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমিরুদ্দিন। সেদিনের পর থেকে আর জরিনা ফিরে আসেনি।