
গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত সে,
চাঞ্চল্য স্থবির, কোলাহল হারিয়েছে অজানায়।
হাসি–আনন্দ ডুবেছে আধারে,
চেতনা-বিহীন স্রোতে ভাসছে শরীর।
উল্লাসের ধনী, ছুটে চলা থেমে গেছে,
শোনা যায় শুধু শনশন নিশ্বাস
যেন চেতনাবিহীন, তবু অস্তিত্ব আছে ধরনীর বুকে।
মাঝে মাঝে মৃদু হাওয়া বয়ে যায়,
যেন সে নিশ্বাস ফেলে ফেলে জীবনের প্রমাণ দিচ্ছে।
কালো চাদরে মুখ ঢেকে নিরবে ঘুমাচ্ছে,
চারপাশে নেই কোনো হইচই,
সকলেই নিজ নিজ গৃহকোণে
এ নিদ্রা ভাঙতে কেউ আসবে না বাইরে।
কালো পরদায় ঢাকা পড়েছে সবকিছু,
আবরণের আড়াল থেকে কিছুই দেখা যায় না।
শরীরের প্রতিটি অংশ আজ চাদরের নিচে লুকানো,
ঘুমন্ত মুখ, শান্ত শরীর সব অদেখা,
অদৃশ্য হয়ে গেছে কালো চাদরের আড়ালে।
রূপে নেই কোনো রঙ, নেই কোনো সজ্জা,
মুখশ্রী মলিন হয়েছে।
তার শ্রী রূপে নজর এড়াতে
সে চোখের কাজলে সেজেছে।
রূপবতীর রূপে নজর পড়লে ঝলসে উঠবে রূপ
তাই কাজল মেখে আড়াল করেছে।
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে,
সম্পর্কের সুতা ছেদ করে।
সজনবরগ বিমুখ হয়েছে,
তাদের চোখে নিখোঁজ সে,
স্মরণ নেই তার কথা,
মত্ত হয়ে আছে গতানুগতিক জীবনে।
তার খোঁজ নেওয়া আজ কল্পনাতীত,
শূন্যতা হয়েছে তার একমাত্র সঙ্গী।
রুদ্ধ দ্বারের অন্দরে পরিবার পুরেছে
চারকোণা প্রাচীরের বাক্সে।
শরীরের সব অঙ্গ একাকার,
শাখা–প্রশাখা মূলভূত।
নিস্তেজ দেহ ক্লান্তির ভারে নুইয়ে পড়েছে,
দূরত্ব বাঁধ ভেঙে দিয়েছে চোখের পাতাগুলোর,
পরস্পরকে আলিঙ্গনের টানে
আর থাকতে পারছে না।
শয্যা হাত বাড়িয়ে ডাকছে তাকে
সময় হয়েছে কাছে যাওয়ার।
ধীরে ধীরে তার দিকে পা বাড়ায়,
শয্যা যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি প্রয়োগ করে
টেনে নিচ্ছে নিস্তেজ দেহকে।
বালিশগুলো অস্থির হয়ে আছে
কেশের কোমল পরশ পেতে।
একে একে নিভছে প্রদীপশিখা,
চোখেদের পাপড়ি রুদ্ধ,
হাত, পা- সব নিথর হয়ে শয্যাশায়ী।
দেহ তলিয়েছে অচেতনতায়,
চেনা মুখগুলো হারিয়েছে অজানায়।
আপন প্রাণগুলো পর হয়ে,
বিমুখতা পালন করে—
ডুবে গেছে নিদ্রার সমুদ্রে।
জাগতিক কিছু আর চোখে পড়ে না,
নয়নের পরদার নিচে
শুধুই অন্ধকার।
মুক্তির ঝর আঘাত হেনেছে পশুদের বন্দিত্বে,
উন্মুক্ত হাওয়া দোলা দিয়েছে স্বাধীনতার দিগন্তে।
পোকামাকড়গুলো মুক্ত বিহঙ্গের মতো,
উড়ে উড়ে গাইছে স্বাধীনতার গান।
অবসান ঘটেছে ঔপনিবেশের,
তাদের পথ আজ তাদের নিজের অধিকারে
যেখানে নেই কোনো শাসন,
অধীনস্ত নয় আর কারও দারে।
আধার দিগন্তের জীবনে
আগমন ঘটেছে নবসংগীর,
তারই হাত ধরে ধীরে ধীরে
রূপালি ঘোমটায় লক্ষী গৃহ প্রবেশ করছে।
বিনিসুতোয় বাধা পরে গেঁথে গেছে জীবনে,
অরধাংগিনী হয়ে ঠাই নিয়েছে অন্তরীক্ষের বুকে।
শান্ত, কোমল সুলক্ষণার মাঝে
নেই কোনো বিশৃঙ্খলার আশ্রয়,
লক্ষীর স্নিগ্ধ পরশ, কোমলতার স্পর্শে
পৃথিবী হলো শান্তির উদ্যান।
লক্ষ্য পুথি দিয়ে মালা গেঁথে
তাকে জড়িয়েছে জীবনে,
গ্রহণ করেছে বরণডালা,
সেজেছে অগণিত ঝিলমিলে মুক্তোয়।
রূপালি ঘোমটার আড়াল বেয়ে
স্নিগ্ধ হাসির ঢেউ নেমে প্রকৃতিকে সিক্ত করেছে,
প্লাবিত করেছে ধরনীকে।
জগতের সব নবদম্পতি তাতে সাতার কেটে
সজাগ রাত পার করছে,
কালো ওড়নায় ঝিলমিল করছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জরি।